পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে?
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যবসা, শিক্ষা, পর্যটন, চিকিৎসা, এমনকি আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করার জন্যও বৈধ পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। তাই যদি আপনার ইতিমধ্যেই ই-পাসপোর্ট বা এমআরপি পাসপোর্ট থাকে এবং এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অথবা শেষ হতে চলেছে, তাহলে আপনাকে দ্রুত পাসপোর্ট রিনিউ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিন্তুু তার আগে আপনাকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে তা জেনে নিতে হবে। কারন, যখন আপনি আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করতে যাবেন, তখন আপনাকে বেশ কিছু ডকুমেন্টস ও নির্দিষ্ট পরিমান রিনিউ ফি প্রদান করতে হবে। তো চলুন এবার তাহলে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো জেনে নেওয়া যাক।
পাসপোর্ট রিনিউ সর্বশেষ তথ্য
২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার পুরোনো এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। তাই, মেয়াদ শেষ হওয়া এমআরপি পাসপোর্টের পরিবর্তে নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বর্তমানে অফলাইনে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ নেই। এখন পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে?
আপনারা যারা একবারেই নতুন তাদের কাছে পাসপোর্ট রিনিউ করার বিষয়টি খুব কঠিন মনে হয়। তাই তারা জানতে চায় যে, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে। আর বর্তমান সময়ের নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে সেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলোর তালিকা নিচে দেওয়া হলো। যেমন,
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি: অনলাইনে আবেদন করার পর প্রাপ্ত প্রিন্ট করা আবেদনপত্র।
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রশিদ: মেশিনের মাধ্যমে বা অনলাইনে ফি পরিশোধের রশিদ।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ: মূল কপি ও ফটোকপি।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট: মূল কপি ও সকল পাতার ফটোকপি।
- সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য: কর্মস্থল থেকে NOC (No Objection Certificate)।
অন্যান্য কাগজপত্র
- সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি।
- যদি পূর্ববর্তী পাসপোর্ট হারিয়ে থাকে: FIR (First Information Report) এর কপি।
- যদি নাম পরিবর্তন করতে চান: বিবাহ সনদপত্র, তালাকনামা, নাম পরিবর্তনের গেজেট নোটিশ ইত্যাদির মূল কপি ও ফটোকপি।
- ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য: অভিভাবকের সম্মতিপত্র (নোটারি পাবলিক কর্তৃক যাচাই করা) ও অভিভাবকের NID/ জন্ম নিবন্ধন সনদের মূল কপি ও ফটোকপি।
তো বর্তমান সময়ে আমাদের পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে -সেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর তালিকা উপরে দেওয়া হলো। কিন্তুু এর পরবর্তী সময়ে যদি আরো অন্য কোনো ডকুমেন্টস এর দরকার হয় তাহলে সেই ডকুমেন্টস গুলোকে এই তালিকায় যুক্ত করে দেওয়া হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ অনলাইন | E-passport gov bd
যদি আপনার কাছে এখনও এমআরপি পাসপোর্ট থাকে তাহলে আপনাকে পুনরায় নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। কারন, আমাদের বাংলাদেশ সরকার এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করার সুবিধা পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। আর বর্তমান সময়ে আপনি নিজের ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন।
তবে অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আপনাকে কি কি পদ্ধতি গুলো অনুসরন করতে হবে সে গুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো।
০১) E-passport ওয়েবসাইটে একাউন্ট তৈরি করুন
আপনি যখন অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই E-passport এর মূল ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে। আর এই ওয়েবসাইট থেকে আপনি তখনি পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন যখন এখানে আপনার একটি একাউন্ট থাকবে।
তো যদি আপনার আগে থেকেই এই ওয়েবসাইটে একাউন্ট করা থাকে তাহলে আপনাকে আর নতুন করে কোনো একাউন্ট তৈরি করতে হবেনা। কিন্তুু আপনার যদি আগে থেকে একাউন্ট করা না থাকে, তাহলে প্রথমে আপনি নিচে দেখানো পদ্ধতি গুলো ফলো করে একটি একাউন্ট ক্রিয়েট করে নিবেন।
ধাপ-১: অনলাইনে আবেদন
- সবার প্রথমে (https://www.epassport.gov.bd/) এই লিঙ্কে যাবেন।
- তারপর "Apply Online" মেনুতে ক্লিক করবেন।
- আপনার আঞ্চলিক অফিস এবং থানা নির্বাচন করবেন।
- এরপর "Continue" বাটনে ক্লিক করবেন।
ধাপ-২: ইমেইল ভেরিফিকেশন
- আপনার ইমেইলে পাঠানো ভেরিফিকেশন লিঙ্কে ক্লিক করুন।
- পুনরায় পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে লগইন করুন।
ধাপ-৩: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
- এবার "Apply for a New e-Passport" বাটনে ক্লিক করুন।
- তারপর "Passport Type" হিসেবে "Ordinary" বা "Official" নির্বাচন করুন।
- এখন "Personal Information" তথ্য গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- সবশেষে "Save and Continue" বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ-৪: ঠিকানা পূরণ
- এখন "Present Address" ও "Permanent Address" তথ্য গুলো সঠিকভাবে পূরণ করবেন।
- তারপর "Save and Continue" বাটনে ক্লিক করবেন।
তো আপনি যদি উপরের এই ০৪ টি ধাপ সঠিকভাবে ফলো করতে পারেন তাহলে আপনি সহজেই একটি একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। আর যখন আপনার একাউন্ট তৈরি করা হয়ে যাবে তারপর আপনি আপনার সেই পাসপোর্ট অনলাইন থেকে রিনিউ করতে পারবেন।
০২) পাসপোর্ট রিনিউ করুন
প্রথমত পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে সেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো আপনার সঙ্গে রাখবেন। তারপর উপরে দেখানো পদ্ধতিতে আপনার একটি নতুৃন একাউন্ট ক্রিয়েট করবেন। আর সবশেষে রিনিউ করার জন্য নিচে দেখানো পদ্ধতি গুলো ফলো করবেন। যেমন,
ধাপ-১: অনলাইনে আবেদন
- প্রথমে, https://www.epassport.gov.bd/ ওয়েবসাইটে যাবেন।
- এরপর "Apply for New Passport" লিঙ্কে ক্লিক করবেন।
- পাসপোর্টের ধরণ (MRP/E-Passport) নির্বাচন করবেন।
- আপনার ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, ঠিকানা ইত্যাদি) যথাযথ ভাবে প্রদান করবেন।
ধাপ-২: পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য
- এবার "Yes, i have a machine readable passport (MRP)" অথবা "Yes, I have Electronic Passport (ePP)" সিলেক্ট করবেন। তবে সেটি অবশ্যই আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ধরণ অনুযায়ী হতে হবে।
- তারপর "What is the reason for your passport request?" থেকে পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণ নির্বাচন করবেন (যেমন: EXPIRED- মেয়াদ শেষ, LOST/ STOLEN- হারিয়ে গেছে)।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্টের নম্বর, জারির তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ প্রদান করবেন।
ধাপ-৩: নতুন পাসপোর্টের তথ্য
- পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবেন।
- আবেদন ফি পরিশোধ করবেন।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র, পূর্ববর্তী পাসপোর্ট ইত্যাদি) স্ক্যান করে আপলোড করবেন।
- আবেদনপত্র জমা দিবেন এবং একটি আবেদন আইডি সংগ্রহ করবেন।
- তারপর আবেদনপত্রের কপিটি প্রিন্ট আউট করবেন।
ধাপ-৪: আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা
- মুদ্রিত আবেদনপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফটোকপি এবং আবেদন ফি এর রসিদ সহ আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যাবেন।
- তারপর নির্ধারিত ফি পরিশোধ করবেন।
- জমা দেওয়ার পর, আপনাকে একটি টোকেন দেওয়া হবে যা দিয়ে আপনি আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারির তারিখ জানতে পারবেন।
পাসপোর্ট রিনিউ কত টাকা লাগে?
এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে ও পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানলাম। তো এবার আমি আপনাকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। আর আপনার সুবিধার জন্য নিচে একটি তালিকা প্রদান করা হলো। যেখানে আপনি বর্তমানে পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে -সে বিষয়ে আপনার আরো অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। তাই নিচে আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলো। যেন আপনি পাসপোর্ট রিনিউ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারেন।
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কত টাকা লাগে?
বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য নথি। কিন্তু যদি দুর্ভাগ্যবশত আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, তাহলে টেনশন নেবেন না! হারানো পাসপোর্ট রি-ইস্যু করা সম্ভব, তবে এর জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং কিছু টাকাও খরচ করতে হবে। আর বর্তমানে হারানো পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার খরচ, রেগুলার পাসপোর্ট এর জন্য ৩,০০০ টাকা এবং অতি জরুরী পাসপোর্ট এর জন্য ৫,০০০ টাকা খরচ হয়।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগে?
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে কিনা। তো এর উত্তর হলো, প্রথম বারের মতো পাসপোর্ট করার সময় এবং অফিসিয়াল পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। কিন্তু পরবর্তীতে আর কখনো লাগবে না!
তবে, স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে পুনরায় পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে। আর আপনার সুবিধার্থে, আপনি চাইলে আবেদনের সাথে সাথেই পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে রাখতে পারবেন। এতে করে পরবর্তীতে যখনই পাসপোর্ট রিনিউ করবেন, তখন আর পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
উপসংহার-
আজকের আলোচিত বিষয় হলো, পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে। আশা করি, এই বিষয়টি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল থেকে পূর্ণাঙ্গ ধারনা নিতে পারবেন।
“পাসপোর্ট রিনিউ করার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস” সম্পর্কে আপনার যদি কিছু জানার থাকে তাহলে আপনি এই পোস্টের নিচে মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও এই পোস্ট-টি তথ্যবহুল মনে হলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।